Bangla Kobita Jibananada Das এর লেখা ঝরা পালক
Bangla Kobita সমগ্র , Jibanananda Das এর এক অনবদ্য সৃষ্টি ঝরা পালক সম্পর্কিত কিছু কথা :-এই বাংলা কবিতা টি প্রথম প্রকাশ হয় ১৩৩৪ সালে যার প্রকাশক ছিলেন শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার, ৯০/২এ হ্যারিসন রোড, কলিকাতা। এই Bangla Kobita টির তখনকার সময়ে মুল্য ছিল মাত্র ১ টাকা।

- কবি-রচিত ভূমিকা:
ঝরা পালক কবিতা সমগ্রের কিছু
বঙ্গবাণী, কল্লোল, প্রবাসী
কালি-কলম, প্রগতি, বিজলী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। বাকিগুলি
নূতন।" কলিকাতা। ১০ই আশ্বিন ১৩৩৪, শ্রী জীবনানন্দ দাশ।
- ঝরা পালক বাংলা কবিতা সমগ্রে মোট ৩৫ টি কবিতার সংযোজন আছে তার একটি সূচীপত্র নিচে দেওয়া হল
ঝরা পালক
|
|
o নীলিমা
o কিশোরের প্রতি
o জীবন-মরণ দুয়ারে আমার
o বেদিয়া
o নাবিক
o বনের চাতক—মনের চাতক
o সাগর-বলাকা
o চলছি উধাও
o একদিন খুঁজেছিনু যারে
o আলেয়া
o অস্তচাঁদে
o ছায়া-প্রিয়া
o ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার
দুলাল
o কবি
|
o সিন্ধু
o দেশবন্ধু
o বিবেকানন্দ
o হিন্দু-মুসলমান
o নিখিল আমার
ভাই
o পতিতা
o ডাহুকী
o শ্মশান
o মিশর
o পিরামিড
o মরুবালু
o চাঁদিনীতে
o দক্ষিণা
o সে কামনা
নিয়ে
o স্মৃতি
o ওগো দরদিয়া
o সারাটি রাত্রি
তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়
|
- এই প্রছদে গল্প -কবিতা কুটির তিনটি কবিতার সংযোজন করেছে আসা রাখব পাঠক কুলের মন জয় করতে পারবে এই অংশ টুকু।
♣ নব নবীনের লাগি
প্রদীপ ধরিয়া আঁধারের বুকে আমার রয়েছি জাগি!
ব্যর্থ পঙ্গু খর্ব প্রাণের বিকল শাসন ভেঙে,
নব আকাঙক্ষা আশার স্বপনে হৃদয় মোদের রেঙে,
দেবতার দ্বারে নবীন বিধান-নতুন ভিক্ষা মেগে
দাঁড়ায়েছি মোরা তরুণ প্রাণের অরুণের অনুরাগী!
ঝড়ের বাতাস চাই।
চারি দিক ঘিরে শীতের কুহেলি, শ্মশানপথের ছাই,
ছড়ায়ে রয়েছে পাহাড় প্রমাণ মৃতের অস্থি খুলি,
কে সাজাবে ঘর-দেউলের পর কঙ্কাল তুলি তুলি?
সূর্যচন্দ্র নিভায়ে কে নেবে জরার চোখের ঠুলি!
মরার ধরায় জ্যান্ত কখনও মাগিতে যাবে কি ঠাঁই!
ঘুমায়ে কে আছে ঘরে!
মৃতুশিশু-বুকে কল্যাণী পুরকামিনী কি আজ মরে!
কে আছে বসিয়া হতাশ উদাস অলস অন্যমনা?
দোদুল আকাশে দুলিয়া উঠিছে রাঙা অশনির ফণা,
বাজে বাদলের রঙ্গমল্লী. ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝনা!
ফিরিছে বালক-ঘর পলাতক ঝরা পালকের ঝড়ে!
আমরা অশ্বরোহী!-
যাযাবর যুবা, বন্দিনীদের ব্যথা মোরা বুকে বহি,
মানবের মাঝে যে দেবতা আছে আমরা তাহারে বরি,
মোদের প্রাণের পূজার দেউলে তাহার প্রতিমা গড়ি,
চুয়া-চন্দন-গন্ধ বিলায়ে আমরা ঝরিয়া পড়ি,
সুবাস ছড়াই উশীরের মতো, ধূপের মতন দহি!
গাহি মানবের জয়!
কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়!
সবার প্রাণের অশ্রু-বেদনা মোদের বক্ষে লাগে,
কোটি বুকে কোটি দেউটি জ্বলিছে-কোটি কোটি শিখা জাগে,
প্রদীপ নিভায়ে মানবদেবের দেউল যাহারা ভাঙে,
আমরা তাদের শস্ত্র, শাসন, আসন করিব ক্ষয়!
-জয় মানবের জয়!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আরও পড়ুন আমি কবি
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
♣ মরীচিকার পিছে
ধূম্র তপ্ত আঁধির কুয়াশা তরবারি দিয়ে চিরে
সুন্দর দূর মরীচিকাতটে ছলনামায়ার তীরে
ছুটে যায় দুটি আঁখি!
-কত দূর হায় বাকি!
উধাও অশ্ব বল্গাবিহীন অগাধ মরুভূ ঘিরে
পথে পথে তার বাধা জমে যায়-তবু সে আসে না ফিরে!
দূরে-দূরে আরো দূরে-আরো দূরে,
অসীম মরুর পারাবার-পারে আকাশ সীমানা জুড়ে
ভাসিয়াছে মরুতৃষা!
-হিয়া হারায়েছে দিশা!
কে যেন ডাকিছে আকুল অলস উদাস বাঁশির সুরে
কোন্ দিগন্তে নির্জন কোন্ মৌন মায়াবী-পুরে!
কোন্-এক সুনীল দরিয়া সেথায় উত্থলিছে অনিবার!
-কান পেতে একা শুনেছে সে তার অপরূপ ঝঙ্কার,
ছোটে অঞ্জলি পেতে,
তৃষার নেশায় মেতে,
উষর ধূসর মরুর মাঝারে এমন খেয়াল কার!
খুলিয়া দিয়াছে মাতাল ঝর্ণা না জানি কে দিলদার!
কে যেন রেখেছে সবুজ ঘাসের কোমল গালিচা পাতি!
যত খুন যত খারাবীর ঘোরে পরান আছিল মাতি,
নিমেষে গিয়েছে ভেঙে
স্বপন-আবেশে রেঙে
আঁখিদুটি তার জৌলস্ রাঙা হ’য়ে গেছে রাতারাতি!
কোন্ যেন এক জিন্-সর্দার সেজেছে তাহার সাথী।
কোন্ যেন পরী চেয়ে আছে দুটি চঞ্চল চোখ তুলে!
পাগলা হাওয়ায় অনিবার তার ওড়না যেতেছে দুলে!
গেঁথে গোলাপের মালা
তাকায়ে রয়েছে বালা,
বিলায়ে দিয়েছে রাঙা নার্গিস্ কালো পশমিনা চুলে!
বসেছে বালিকা খর্জুরছায়ে নীল দরিয়ার কূলে।
ছুটিছে ক্লিষ্ট ক্লান্ত অশ্ব কশাঘাত জর্জর,
চারি দিকে তার বালুর পাথার-মরুর হাওয়ার ঝড়;
নাহি শ্রান্তির লেশ,
সুদুর নিরুদ্দেশ-
অসীম কুহক পাতিয়া রেখেছে তাহার বুকের পর!
পথের তালাসে পাগল সোয়ার হারায়ে ফেলেছে ঘর!
আঁখির পলকে পাহাড়ের পারে কোথা সে ছুটিয়া যায়!
চকিত আকাশ পায় না তাহার নাগাল খুঁজিয়া হায়!
ঝড়ের বাতাস মিছে
ছুটছে তাহার পিছে!
মরুভূর প্রেত চকমিয়া তার চক্ষের পানে চায়-
সুরার তালাসে চুমুক দিল কে গরলের পেয়ালায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
- আরও পড়ুন সেদিন এ-ধরণীর
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
নাবিক
কবে তব হৃদয়ের নদী
বরি নিল অসম্বৃত সুনীল জলধি!
সাগর-শকুন্ত-সম উল্লাসের রবে
দূর সিন্ধু-ঝটিকার নভে
বাজিয়া উঠিল তব দুরন্ত যৌবন!
পৃথ্বীর বেলায় বসি কেঁদে মরে আমাদের শৃঙ্খলিত মন!
কারাগার-মর্মরের তলে
নিরাশ্রয় বন্দিদের খেদ-কোলাহলে
ভ’রে যায় বসুধার আহত আকাশ!
অবনত শিরে মোরা ফিরিতেছি ঘৃণ্য বিধিবিধানের দাস!
-সহস্রের অঙুলিতর্জন
নিত্য সহিতেছি মোরা-বারিধির বিপ্লব-গর্জন
বরিয়া লয়েছ তুমি, তারে তুমি বাসিয়াছ ভালো;
তোমার পক্ষরতলে টগ্বগ্ করে খুন-দুরন্ত, ঝাঁঝালো!-
তাই তুমি পদাঘাতে ভেঙে গেলে অচেতন বসুধার দ্বার,
অবগুণ্ঠিতার
হিমকৃষ্ণ অঙুলির কঙ্কাল-পরশ
পরিহরি গেলে তুমি-মৃত্তিকার মদ্যহীন রস
তুহিন নির্বিষ নিঃস্ব পানপাত্রখানা
চকিতে চূর্ণিয়া গেলে-সীমাহারা আকাশের নীল শামিয়ানা
বাড়ব-আরক্ত স্ফীত বারিধির তট,
তরঙ্গের তুঙ্গ গিরি, দুর্গম সঙ্কট
তোমারে ডাকিয়া নিল মায়াবীর রাঙা মুখ তুলি!
নিমেষে ফেলিয়া গেলে ধরণীর শূন্য ভিক্ষাঝুলি!
প্রিয়ার পাণ্ডুর আঁখি অশ্রু-কুহেলিকা-মাখা গেলে তুমি ভুলি!
ভুলে গেলে ভীরু হৃদয়ের ভিক্ষা, আতুরের লজ্জা অবসাদ,-
অগাধের সাধ
তোমারে সাজায়ে দেছে ঘরছাড়া ক্ষ্যাপা সিন্দবাদ!
মণিময় তোরণের তীরে
মৃত্তিকায় প্রমোদ-মন্দিরে
নৃত্য-গীত-হাসি-অশ্রু-উৎসবের ফাঁদে
হে দুরন্ত দুর্নিবার-প্রাণ তব কাঁদে!
ছেড়ে গেলে মর্মন্তুদ মর্মর বেষ্টন,
সমুদ্রের যৌবন-গর্জন
তোমারে ক্ষ্যাপায়ে দেছে, ওহে বীর শের!
টাইফুন্-ডঙ্কার হর্ষে ভুলে গেছ অতীত-আখের
হে জলধি পাখি!
পে তব নাচিতেছে ল্যহারা দামিনী-বৈশাখী!
ললাটে জ্বলিছে তব উদয়াস্ত আকাশের রত্নচূড় ময়ূখের টিপ,
কোন্ দূর দারুচিনি লবঙ্গের সুবাসিত দ্বীপ
করিতেছে বিভ্রান্ত তোমারে!
বিচিত্র বিহঙ্গ কোন্ মণিময় তোরণের দ্বারে
সহর্ষ নয়ন মেলি হেরিয়াছ কবে!
কোথা দূরে মায়াবনে পরীদল মেতেছে উৎসবে-
স্তম্ভিত নয়নে
নীল বাতায়নে
তাকায়েছ তুমি!
অতি দূর আকাশের সন্ধ্যারাগ-প্রতিবিম্বে প্রস্ফুটিত সমুদ্রের
আচম্বিত ইন্দ্রজাল চুমি
সাজিয়াছ বিচিত্র মায়াবী!
সৃজনের জাদুঘর-রহস্যের চাবি
আনিয়াছ কবে উন্মোচিয়া
হে জল-বেদিয়া!
অল্য বন্দর পানে ছুটিতেছ তুমি নিশিদিন
সিন্ধু বেদুঈন!
নাহি গৃহ, নাহি পান্থশালা-
লক্ষ লক্ষ ঊর্মি-নাগবালা
তোমারে নিতেছে ডেকে রহস্যপাতালে-
বারুণী যেথায় তার মণিদীপ জ্বালে!
প্রবাল-পালঙ্ক-পাশে মীননারী ঢুলায় চামর!
সেই দুরাশার মোহে ভুলে গেছ পিছুডাকা স্বর
ভুলেছ নোঙর!
কোন্ দূর কুহকের কূল
লক্ষ্য করি ছুটিতেছে নাবিকের হৃদয়-মাস্তুল
কে বা তাহা জানে!
অচিন আকাশ তারে কোন্ কথা কয় কানে কানে!
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আরও Bangla Kobita পড়তে নিচের লিঙ্ক গুলি তে .চাপ দিন -
- হৃদয় নিঃসঙ্গ চিল
- ১৩৩৩
- ইচ্ছে ছিলো
- অগ্ন্যুৎসব
- আরশি
- পূজারিণী
- আমি যদি হতাম
- কৃষ্ণকলি
- কেউ কথা রাখেনি
To Read Rabindranath Tagore Poems Visit the following Links.